প্রোডাক্ট ফ্রি-তে দিয়ে দিন
প্রোডাক্ট ফ্রি-তে দিয়ে দেওয়া শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে। কিন্তু নতুন নতুন বাজারে আসলে মাঝেমাঝে এটাই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার একমাত্র উপায়। একটা প্রােডাক্ট বাজারে একদম নতুন এলে অনেকে তা ব্যবহারই করতে চায় না, সেখানে সেই প্রােডাক্ট বিক্রি করতে যাওয়া একটু দুষ্করই বটে। সেক্ষেত্রে নির্ভরতা তৈরি করতে ফ্রি-তে দিয়ে দেওয়া একটা ভালাে উপায় হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, ফ্রি-তে দেওয়া প্রােডাক্টের এমন কোনাে আনুষঙ্গিক অংশ থাকতে হবে যা কাস্টোমার কিনতে বাধ্য হয়। এমন অনেক উদাহরণ আছে, মূল প্রােডাক্টের দাম কম কিন্তু কোম্পানি চলছে প্রােডাক্টের আনুষঙ্গিক অংশ বিক্রির টাকায়। যেমন, গাড়ির স্পেয়ার পার্টস। গাড়ির দাম কম কিন্তু নির্ভেজাল স্পেয়ার পার্টের দাম খুব বেশি। কারণ সেটা বিক্রি করেই গাড়ি নির্মাতার মূল আয় হয়। ফ্যাক্টরি থেকে বের হওয়া প্রত্যেকটা প্রােডাক্টের ওপর দাম বসাতে হবে এমন কোনাে কথা নেই। প্রচুর কোম্পানি আছে যারা সফল হয়েছে প্রােডাক্ট ফ্রি-তে দিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে।
আইডিয়া
জিলেট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা কিং সি. জিলেট সেফটি রেজর উদ্ভাবন করেন। সেসময়ে তিনি ছিলেন বােতলের মুখ উৎপাদক একটা কোম্পানির সেলসপার্সন। একদিন তার মান্ধাতা আমলের ক্ষুরটা পুরােনাে হয়ে গেলে তার মাথায় আসে এমন একটা রেজর তৈরি করতে হবে যা ডিসপােজেবল, অর্থাৎ ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া যায়। ব্লেড আর ব্লেড ধরার রেজর তৈরির একটা উপায় বের করলেন (প্রথম ব্লেড বানানাে হয়েছিল ঘড়ির কাটা দিয়ে)। কিন্তু হিসাব দাঁড়াল, ব্লেডের ব্যবসা লাভজনক হতে হলে তা উৎপাদন করতে হবে লাখে লাখে। দরকার পর্যাপ্ত গ্রাহক যারা দ্রুত ভয়ানক দর্শন ক্ষুর বাদ দিয়ে আধুনিক ডিসপােজেবল ব্লেডের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাই ব্লেডসহ হাজার হাজার রেজর ফ্রি-তে দিয়ে দেওয়া শুরু করলেন জিলেট। তিনি জানতেন, এমন ব্লেড ব্যবহারের পর খুব অল্প লােকই আবার মান্ধাতা আমলের ক্ষুর ব্যবহার শুরু করবে। ক’দিনের মধ্যে মানুষের আবারও ব্লেডের প্রয়ােজন হবে।
সময়ের সাথে সাথে প্রােডাক্টটা বাজারে প্রতিষ্ঠিত হলাে। প্রথম ব্যবহারকারীরা তাদের বন্ধুদের বলতে লাগল। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথেই জিলেট এবার বেজরগুলাের জন্য টাকা চাওয়া শুরু করলেন। রেজর বিক্রি হতাে উৎপাদন -খরচের কাছাকাছি দামে, কখনও তার চেয়েও কম দামে। কিন্তু কোম্পানির টাকা আসত ব্লেড বিক্রি করে। ব্লেড তৈরিতে নামমাত্র খরচ হতাে। অথচ চড়া দামে বিক্রি করা যেত।
জিলেটের মূল মার্কেটিং আইডিয়া আজও একই আছে।
প্রয়োগ
- এমন প্রােডাক্ট চিহ্নিত করুন যার আনুষঙ্গিক প্রােডাক্ট, স্পেয়ার বা অন্য কিছু কেনার দরকার থাকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত।
- টার্গেট মার্কেট ঠিক করুন। যিনি দ্বিতীয়বার প্রােডাক্ট কিনবেন না, তাকে ফ্রি দেওয়ার দরকার নেই।
- ইন্টেলেকচুয়াল প্রােপার্টি রাইট (প্যাটেন্ট ইত্যাদি) যেন ঠিকঠাক থাকে। যাতে আপনার দিয়ে দেওয়া প্রােডাক্টের সাথে মিল রেখে অন্যরা বাজারে প্রােডাক্ট আনতে না পারে।
— জিম ব্লাইথ এর লেখা ১০০ গ্রেট মার্কেটিং আইডিয়া বই থেকে